শনাক্ত হচ্ছে পাচারকারী সিন্ডিকেট

হুন্ডি সিন্ডিকেট শনাক্তে কাজ শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। দেশের মোটা দাগে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ পাচার থামাতে এই পদক্ষেপ। অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের টাকা মেরে সরাসরি বিদেশে পাঠাচ্ছে। আবার অনেকে আমদানিতে ওভার ইনভয়েস করে জড়িয়ে পড়ছে অর্থ পাচারে। বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার পরও থামানো যাচ্ছে না এই অর্থ পাচার। দেশ থেকে নানা পদ্ধতিতে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর। অর্থ পাচারের ৮০ ভাগই হচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানিতে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েস বা পণ্যের অতিরিক্ত দাম দেখানো হয়, যার পুরো অর্থ পাচার হচ্ছে। সরকারি সুবিধা দিয়েও রেমিট্যান্সে হুন্ডি থামানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া পণ্য বিক্রির জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম আদায় করা হাজার হাজার কোটি টাকার যথাযথ ব্যবহার করেনি দেশের অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে শীর্ষ ১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার না করে দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য উদ্ঘাটন হচ্ছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের পানামা ও প্যারাডাইস পেপারের প্রকাশিত তথ্যে বারবার সামনে এসেছে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত তথ্যে আবারও দেশটির ব্যাংকগুলোতে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা  থাকার কথা জানিয়েছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন পণ্যের দাম ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসের (বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখানো) মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে। গত এক বছরে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিএফআইইউতে ৮ হাজার ৫৭১টি লেনদেন ও কার্যক্রম (এসটিআর ও এসএআর) সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে যা ছিল ৫ হাজার ২৮০টি। ফলে এক বছরের ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম বেড়েছে ৩ হাজার ২৯১টি বা ৬২ শতাংশ। এই সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে সবচেয়ে বেশি ৭ হাজার ৯৯৯টি এসটিআর ও এসএআরের রিপোর্ট বিএফআইইউতে এসেছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ৪ হাজার ৪৯৫টি। অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতে এসটিআর ও এসএআর এক বছরে বেড়েছে ৩ হাজার ৫০৪টি বা ৭৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫৭টি এসটিআর ও এসএআরের তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬৭০টি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সন্দেহজনক লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২১-২২ অর্থবছরে নগদ লেনদেনের তথ্য প্রেরণ (সিটিআর) বেড়েছে। ২৬ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এনবিআরের কাছে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যে ৬২টি প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের পণ্য বিদেশে রপ্তানি না করে এবং কিছু প্রতিষ্ঠান ঘোষণার কম পণ্য বিদেশে পাঠিয়ে সরকারের কাছ থেকে রপ্তানি প্রণোদনা নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি প্রণোদনার অর্থ ফেরত আনতে এনবিআরের কাছে বিল অব এক্সপোর্টের তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে প্রকৃত রপ্তানি তথ্য গোপন করে ৬২ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনার অর্থ নিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে আরও ১৯ প্রতিষ্ঠান ঘোষণার কম পণ্য বিদেশে রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ কাগজে-কলমে রপ্তানি করা হয়েছে। রপ্তানির বিপরীতে সংশ্লিষ্ট দেশে ব্যাংক অর্থ পরিশোধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে দেশ থেকে কোনো পণ্য যায়নি। সংশ্লিষ্ট দেশে রপ্তানিকারকদের প্রতিনিধি সেই বিল গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ পুরো অর্থ এভাবে পাচার হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস অভ্যন্তরীণ তদন্তে এসব জালিয়াতির প্রমাণ পায়। এসব রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক প্রতিবেদনে এসব প্রতিষ্ঠানের রপ্তানির তথ্য যাচাই করে ভুয়া প্রমাণিত হয়। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের নেওয়া সরকারি প্রণোদনা ফেরত আনার জন্য ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। আর এনবিআরের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভুয়া ৮১ রপ্তানিকারকের রপ্তানি তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে বলেছে।

 

পাচার রোধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) রাষ্ট্রীয় সাতটি সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু আসছে না কোনো কার্যকর ফল। পাচার বন্ধ না হওয়ার নেপথ্যে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতাসহ ১১ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্পদ পুনরুদ্ধার, অর্থাৎ বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরতের ক্ষেত্রেও চারটি প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও মাসের পর মাস এর কোনো কার্যকারিতা দেখা যায় না। সম্প্রতি দুদক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে আর্থিক লেনদেনে সন্দেহজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে। বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্তের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে কোনো অগ্রগতি নেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় বছরে দেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। প্রতি ডলার ৯০ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হুন্ডিতে আসছে দেশে। বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ না পাঠিয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। রেমিট্যান্সের এই অর্থ পুরোটাই দেশের বাইরে থেকে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। গত দুই মাস দেশের রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে আশঙ্কাজনক হারে।

 

বিএফআইইউ প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ‘দেশ থেকে অর্থ পাচার হয় না এটা বলা যাবে না। প্রতিটা উন্নয়নশীল দেশ থেকেই অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে। যেহেতু আমরা উন্নয়নশীল দেশ, সে ক্ষেত্রে আমাদের এখান থেকেও হয়। অবৈধ পথ ছাড়া বৈধভাবেও দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। তবে যে টাকা একবার পাচার হয়ে যায় তা ফেরানো কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে সর্বাধিক অর্থ পাচার হয়। আমাদের এক তদন্তে দেখা গেছে, কোনো কোনো আমদানি পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং হয়েছে। তবে এখন ওভার ইনভয়েসিং কমে এসেছে। দেশ থেকে এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে এমন কোনো তথ্য বিএফআইইউর কাছে নেই। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আজ থেকে সচিবালয় ও যমুনা এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

» হাড় ভালো রাখতে কী খাবেন?

» মসলা ছাড়া পেশোয়ারি গোশত তৈরির রেসিপি

» প্রেমিকা ঐন্দ্রিলার জন্য কেনাকাটা করেই পকেট ফাঁকা অঙ্কুশের

» জেলের জালে ধরা পড়ল ২১ কেজির কোরাল,২৯ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি

» ট্রাকের ধাক্কায় ইজিবাইকের চালকসহ দুইজন নিহত

» নির্বাচনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করলে কালো মেঘ নেমে আসবে :

» বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস আজ

» ঈদের তৃতীয় দিনও চলবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

» সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শনাক্ত হচ্ছে পাচারকারী সিন্ডিকেট

হুন্ডি সিন্ডিকেট শনাক্তে কাজ শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। দেশের মোটা দাগে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ পাচার থামাতে এই পদক্ষেপ। অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের টাকা মেরে সরাসরি বিদেশে পাঠাচ্ছে। আবার অনেকে আমদানিতে ওভার ইনভয়েস করে জড়িয়ে পড়ছে অর্থ পাচারে। বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার পরও থামানো যাচ্ছে না এই অর্থ পাচার। দেশ থেকে নানা পদ্ধতিতে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর। অর্থ পাচারের ৮০ ভাগই হচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানিতে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েস বা পণ্যের অতিরিক্ত দাম দেখানো হয়, যার পুরো অর্থ পাচার হচ্ছে। সরকারি সুবিধা দিয়েও রেমিট্যান্সে হুন্ডি থামানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া পণ্য বিক্রির জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম আদায় করা হাজার হাজার কোটি টাকার যথাযথ ব্যবহার করেনি দেশের অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে শীর্ষ ১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার না করে দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য উদ্ঘাটন হচ্ছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের পানামা ও প্যারাডাইস পেপারের প্রকাশিত তথ্যে বারবার সামনে এসেছে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত তথ্যে আবারও দেশটির ব্যাংকগুলোতে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা  থাকার কথা জানিয়েছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন পণ্যের দাম ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসের (বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখানো) মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে। গত এক বছরে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিএফআইইউতে ৮ হাজার ৫৭১টি লেনদেন ও কার্যক্রম (এসটিআর ও এসএআর) সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে যা ছিল ৫ হাজার ২৮০টি। ফলে এক বছরের ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম বেড়েছে ৩ হাজার ২৯১টি বা ৬২ শতাংশ। এই সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে সবচেয়ে বেশি ৭ হাজার ৯৯৯টি এসটিআর ও এসএআরের রিপোর্ট বিএফআইইউতে এসেছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ৪ হাজার ৪৯৫টি। অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতে এসটিআর ও এসএআর এক বছরে বেড়েছে ৩ হাজার ৫০৪টি বা ৭৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫৭টি এসটিআর ও এসএআরের তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬৭০টি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সন্দেহজনক লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২১-২২ অর্থবছরে নগদ লেনদেনের তথ্য প্রেরণ (সিটিআর) বেড়েছে। ২৬ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এনবিআরের কাছে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যে ৬২টি প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের পণ্য বিদেশে রপ্তানি না করে এবং কিছু প্রতিষ্ঠান ঘোষণার কম পণ্য বিদেশে পাঠিয়ে সরকারের কাছ থেকে রপ্তানি প্রণোদনা নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি প্রণোদনার অর্থ ফেরত আনতে এনবিআরের কাছে বিল অব এক্সপোর্টের তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে প্রকৃত রপ্তানি তথ্য গোপন করে ৬২ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনার অর্থ নিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে আরও ১৯ প্রতিষ্ঠান ঘোষণার কম পণ্য বিদেশে রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ কাগজে-কলমে রপ্তানি করা হয়েছে। রপ্তানির বিপরীতে সংশ্লিষ্ট দেশে ব্যাংক অর্থ পরিশোধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে দেশ থেকে কোনো পণ্য যায়নি। সংশ্লিষ্ট দেশে রপ্তানিকারকদের প্রতিনিধি সেই বিল গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ পুরো অর্থ এভাবে পাচার হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস অভ্যন্তরীণ তদন্তে এসব জালিয়াতির প্রমাণ পায়। এসব রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক প্রতিবেদনে এসব প্রতিষ্ঠানের রপ্তানির তথ্য যাচাই করে ভুয়া প্রমাণিত হয়। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের নেওয়া সরকারি প্রণোদনা ফেরত আনার জন্য ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। আর এনবিআরের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভুয়া ৮১ রপ্তানিকারকের রপ্তানি তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে বলেছে।

 

পাচার রোধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) রাষ্ট্রীয় সাতটি সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু আসছে না কোনো কার্যকর ফল। পাচার বন্ধ না হওয়ার নেপথ্যে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতাসহ ১১ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্পদ পুনরুদ্ধার, অর্থাৎ বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরতের ক্ষেত্রেও চারটি প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও মাসের পর মাস এর কোনো কার্যকারিতা দেখা যায় না। সম্প্রতি দুদক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে আর্থিক লেনদেনে সন্দেহজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে। বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্তের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে কোনো অগ্রগতি নেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় বছরে দেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। প্রতি ডলার ৯০ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হুন্ডিতে আসছে দেশে। বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ না পাঠিয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। রেমিট্যান্সের এই অর্থ পুরোটাই দেশের বাইরে থেকে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। গত দুই মাস দেশের রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে আশঙ্কাজনক হারে।

 

বিএফআইইউ প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ‘দেশ থেকে অর্থ পাচার হয় না এটা বলা যাবে না। প্রতিটা উন্নয়নশীল দেশ থেকেই অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে। যেহেতু আমরা উন্নয়নশীল দেশ, সে ক্ষেত্রে আমাদের এখান থেকেও হয়। অবৈধ পথ ছাড়া বৈধভাবেও দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। তবে যে টাকা একবার পাচার হয়ে যায় তা ফেরানো কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে সর্বাধিক অর্থ পাচার হয়। আমাদের এক তদন্তে দেখা গেছে, কোনো কোনো আমদানি পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং হয়েছে। তবে এখন ওভার ইনভয়েসিং কমে এসেছে। দেশ থেকে এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে এমন কোনো তথ্য বিএফআইইউর কাছে নেই। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com